মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সমীপে খোলা চিঠি
- এখলাসুল হক
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চিকস এন্ড ফিডস লিমিটেড
আসসালামু আলাইকুম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি এমন একটি দেশের প্রধান মন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসন করে যাচ্ছেন যা অন্য যে কোনো দেশের চাইতে ভিন্ন। জীবনানন্দ দাসের রূপসী বাংলা বা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার বাংলাকে জীবনে ধারণ করে বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন এমন এক স্বপ্ন, যেখানে বাঙালি জাতি বিশ্বের দরবারে অনন্য এক জাতি হিসেবে অধূষ্ঠিত হবে। ভেদাভেদহীন এক দেশ। নিজের পিতা এবং জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণের দ্বায়িত্ব এখন আপনার ওপরে। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে আপনি এরই মধ্যে অনেক বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। হেনরি কিসিঞ্জারের সেই তলাবিহীন ঝুড়ির দেশটিকে আপনি মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে নেয়ার জন্য সবই করেছেন। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অনেক বিষয়েই রোলমডেল হিসেবে স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই আজ আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি।
আপনি স্বপ্ন দেখছেন বলেই দেশ এত প্রতিকূলতার মধ্যেও এগুচ্ছে। এমন একটি দেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব আপনি করছেন, যেখানে বিশ্বের যে কোনো একটি মহাশক্তিধর দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বসিয়ে দিলে তিন দিনের মধ্যে হয় তিনি পাগল হয়ে যাবেন অথবা রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যাবেন। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনি বছরের পর বছর পার করে দেশটিকে বিশ্বের দরবারে রোলমডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা। আপনার প্রাপ্য অনেক বেশি যা ভাষা দিয়ে প্রকাশ করার মতো কোনো ভাষা আমার জানা নেই। মহান আল্লাহতায়ালা আপনাকে শতবর্ষ পর্যন্ত সুস্থ রাখুন এবং দেশের জন্য কাজ করার তৌফিক দান করুন আমিন। আপনি তো একজন মানুষ, রোবট নন।
আমাদের দেশে নিযুক্ত একজন মন্ত্রী এযাবৎকালে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে এক ইঞ্চি এগিয়ে নিয়েছেন বলে আমার মনে হয়না। কারণ, প্রতিটি বিষয়েই তাঁরা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে...। তাই যদি হয়, তাহলে দেশে এত মন্ত্রীর প্রয়োজনীতা আছে বলে তো মনে হয়না। হাজারো আলোচনা করে নির্দেশনা দেয়াতে আপনি যে সময় দিচ্ছেন, সেই সময়ে আপনি অনায়াসে নিজেই সবকিছু সামলাতে পারবেন। আশা করি তাতে দেশ মধ্য আয়ের দেশ নয় বরং উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে যেতে পারে। যেতে পারে কেন, অবশ্যই উচ্চ আয়ের দেশ হিসেবে দশ বছরেই জাতিসংঘে জায়গা করে নেবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় মন্ত্রীগণ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চাকুরী করেন। বিনাপয়সায় সময় দেন না। এক একজন মন্ত্রীর পেছনে রাষ্ট্রের অনেক টাকা গুনতে হয়। সব সিদ্ধান্ত যদি আপনাকেই দিতে হয়, তাহলে রাষ্ট্রের এই পয়সা অপচয় নয় কি। দেশবাসী হিসেবে আমরা চাই মাননীয় মন্ত্রীগণ বুদ্ধি দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে আপনাকে সাহায্য করবেন। আপনি কোনো ব্যাপারে বাড়তি কিছু যোগ করতে চাইলে সেটা যোগ করে দেবেন। দেখুন না দেশটা কোথায় যায়। আগামী দশ বছরের মধ্যে জি২০-এর কোনো একটি দেশকে হটিয়ে, বাংলাদেশ ওই জি২০তে জায়গা করে নেবে। বঙ্গবন্ধুর মতো আপনিও এমন একটা স্বপ্ন দেখুন। স্বপ্ন দেখাটা খুবই জরুরি। আজকে আপনি যা স্বপ্ন দেখবেন, কালকে তা সত্যিতে পরিণত হবে।
স্বপ্নবিহীন জীবনে কোনো রঙের ঝলকানি থাকেনা। স্বপ্ন দেখুন সেই সোনার বাংলার, যেখানে সোনার রঙে ঝলকে উঠবে এই বাংলাদেশ। ওয়ান টু ওয়ান আইডিয়া শেয়ারিং একটি শক্তিশালী মাধ্যম, যেখানে অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসে, জানা যায় অনেক কিছু এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে অনেক সাহায্য করে। করোনা পরবর্তী সময়ে কি করবেন তার একটা রূপরেখা আপনি এখন থেকে শুরু করতে পারেন। আমরা একদিন এই করোনা নিয়ন্ত্রিত মহামারী থেকে মুক্তি পাবো। দু'দিন আগে আর পরে। এই মহামারীর পরে আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার অনেক পরিবর্তন আসবে। সেই পরিবর্তিত অবস্থাকে কিভাবে মোকাবিলা করবেন সেটা ভাবার সময় এখনি। দেশের বর্তমান মহামারীকে কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে সেটা আপনার মন্ত্রী পরিষদের ওপর ছেড়ে দিন। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে: হাযার এন্ড ফায়ার। প্রয়োজনে সেটাকে ব্যবহার করুন। সবাইকে হারিয়ে আপনার জীবনে দুই সন্তান, এক বোন এবং এদেশের মানুষ ছাড়া আর কি আছে। ভাবুন দেশের সতের কোটি মানুষের জন্যে, মাত্র কয়েকশত এমপি বা মন্ত্রীর জন্য নয়। যাঁরা ভালো করবেন, তাঁদের প্রশংসা করুন, উৎসাহ দিন। যাঁরা তা করতে পারবেন না, তাঁদেরকে বহিস্কার করুন, রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় বন্ধ করুন এবং উপযুক্ত কাউকে পেলে নিয়োগ দিন।
করোনার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সামাজিক সংক্রমন বন্ধ করা। জরুরি সেবা ছাড়া সমস্ত কর্মকান্ড সত্যিকার অর্থে বন্ধ করে দিন অন্তত একমাসের জন্য। দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য এটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ছুটি নাম দিয়ে মানুষকে ছুটির আনন্দে ছুটতে দেবেন না। সরকারের বা প্রাইভেট জরুরি খাতগুলোকে খোলা রেখে বাদ বাকি সব আরও একমাসের জন্য একদম বন্ধ রাখুন। ওয়ার্ক ফ্রম হোম বা অনলাইন-এ কার্যক্রম আরো একমাসের জন্য বর্ধিত করুন। করোনাকালীন সময়ের জন্য প্রয়োজনে সারচার্জ আরোপ করুন যাঁদের কাজ করার জন্য সুযোগ দিচ্ছেন, তাঁদের উপর। যে শিল্পগুলো বন্ধ রাখলে মানুষ, পশু-পাখি বা মাছ না খেয়ে মারা যাবে, শুধু সেই শিল্পগুলোকে এই সময়ের জন্য খোলা রাখুন। সেখানে শর্ত জুড়ে দিন - শ্রমিক কর্মচারীদের যাঁরা নিরাপদভাবে ওই শিল্প এলাকায় থাকার ব্যাবস্থা করতে করবেন, শুধু তাঁরাই খোলা রাখতে পারবেন। আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি খাদ্যশিল্প একটি সাপ্লাই চেন ব্যবহার করে, যা দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় তাঁদের তৈরি সামগ্রী পৌঁছে দেয়। এর পরে আপনি নির্দেশ দিন, দোকানদার পরিপূর্ণ নিরাপত্তা বজায় রেখে তাঁর এলাকার ঘরে ঘরে প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেবেন। গার্মেন্টস সহ অনেক এক্সপোর্ট কারখানা দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা আনে ও সেখানেও শর্ত জুড়ে দিন।
শ্রমিক কর্মচারীদের যাঁরা নিরাপদভাবে ওই শিল্প এলাকায় থাকার ব্যাবস্থা করতে করবেন, শুধু তাঁরাই খোলা রাখতে পারবেন। এই সব শিল্প-কারখানা থেকে সামান্য সারচার্জ নিন এবং তা দিয়ে কর্মহীন, দরিদ্র মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করুন। কথা বলুন সমস্ত শিল্প-কারখানার মালিকের সাথে। আপনার সুযোগ্য সন্তান, মাননীয় উপদেষ্টা জনাব সজীব ওয়াজেদ জয় দেশের তথ্য-প্রযুক্তিতে একটি বিপ্লব এনেছেন। ব্যবহার করুন তথ্য-প্রযুক্তির যুৎসই একটি আপ্স। এমনকি সরাসরি ফোনে কথা বললে। আপনি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রতিদিন গড়ে ৫০০ শিল্প-কারখানার মালিকের সাথে কথা বলতে পারবেন। তাঁদেরকে বলুন, সবাই মিলে দেশকে বাঁচাতে হবে। তাঁরা সানন্দে আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন। কথা বলুন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে। এখন বাংলাদেশের সতের কোটি মানুষ আপনার বন্ধু, এক করোনা নামের এই মহামারী ছাড়া। করোনা আগামীকাল কাকে আক্রমণ করবে সেই গ্যারান্টি কেউই দিতে পারবে না। এখন সব বিভেদ ভুলে গিয়ে একসাথে কাজ করে এর মোকাবিলা করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একবার এগুলো করে দেখুন আপনার মাথার ভার অনেক কমে যাবে। ইংরেজিতে আরো একটি প্রবাদ আছে: ঞড়মবঃযবৎ রং ধষধিুং ংঃৎড়হমবৎ।
সবাইকে নিয়ে কাজ করলে এই দেশ সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত হবে ইন শা আল্লাহ। আমাদের এখনকার যুদ্ধ করোনার বিরুদ্ধে। কোনো দল বা গোত্রের বিরুদ্ধে নয়। করোনা কারো বন্ধু নয়। এক মিনিট পরে করোনা কাকে ছোবল মারবে সেটা কেউই জানেন না। দেশের দায়িত্বে আপনি আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসতে। দেশের উন্নয়নে যেমন আপনি প্রশংসার দাবি রাখেন, তেমনি দেশের দুর্যোগেও আপনি দায়ী থাকবেন। সে দায় আপনি এড়াতে পারবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এখনি সময় সবাইকে নিয়ে একসাথে এই যুদ্ধে লড়াই করবার। দেখবেন, আপনি এই লড়াইয়ে জিতে যাবেন। করোনাকে হারিয়ে দেবেন। দেশ বাঁচবে, দেশের মানুষ বাঁচবে। দেশের সতের কোটি মানুষ জিতলে আপনিও জিতবেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবিলা করবেন সেটাও একসাথে কথা বলুন। দেখবেন সব কিছুই সহজ হয়ে যাবে। এখনি সময় সেটা ভাবার। প্রয়োজনে ওয়ান টু ওয়ান আইডিয়া শেয়ারিং ব্যবস্থায় কথা বলুন, দেখবেন অনেকগুলো পথ খুলে যাবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি সুস্থ থাকুন, বাংলাদেশকে সত্যিকারের সোনার বাংলায় পরিণত করুন, সেটাই আমাদের চাওয়া।