বাংলাদেশে ভাসমান ফিস ফিড (ঋষড়ধঃরহম ঋরংয ঋববফ) প্রচলন গত কয়েক বছরে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। প্রচলিত ডুবন্ত ফিডের চাহিদার পাশাপাশি ভাসমান ফিডের চাহিদা প্রতিনিয়তই বেড়ে চলছে। ২০০১ সালে রুপসী ফিস ফিড মিল বাংলাদেশে প্রথম ভাসমান ফিডের যাত্রা শুরু করে। শুরুর দিকে খামারীদের ভিতর ভাসমান ফিডের প্রভাব তেমন পড়েনি। পরবর্তীকালে ২০০৬ সালে মেগা ফিড একটু বড় পরিসরে শুরু করে ভাসমান ফিডের বাজারজাতকারণ যা ক্রমান্বয়ে খামারীদের আগ্রহী করে। ২০০৭ সালে আফিল ফিড লিঃ তাদের ভাসমান ফিড মিল প্ল্যান্ট শুরু করে যা উৎপাদিত ফিড একান্তই নিজস্ব খামারে ব্যবহৃত হত। একে একে আফতাব, প্যারাগণ, এসিআই-গোদরেজ, ন্যাশনাল, ইনডেক্স, নারিশ, এসএমএস, বিশ^াস গ্রুপ, কোয়ালিটি, এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রাস্ট (অওঞ), ফ্রেশ, কৃষিবিদ গ্রুপ ভাসমান ফিড মিল প্ল্যান্ট স্থাপন করে। বর্তশানে প্রায় প্রতিটি ফিড মিল কোম্পানীই ডুবন্ত ফিডের পাশাপাশি ভাসমান ফিড তৈরী করছেন বা তৈরী করার কথা ভাবছেন। ভাসমান ফিড তৈরীর ক্ষেত্রে অনেকের অভিজ্ঞতা ভাল আবার সঠিকভাবে মেশিন পত্র নির্বাচন করতে না পারায় অনেকেরই অভিজ্ঞতা তিক্ত। এজন্য নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ভাসমান ফিশ ফিড উৎপাদন করার আগে কি কি বিষয়ে বিবেচনা করতে হবে, তা উপর আমাদেও এই আলোচনা। ফিশ ফিড দু’রকম হয়ে থাকে। প্রথম পিলেটেড (চবষষবঃবফ) ফিড ও দ্বিতীয়টি এক্সট্রুডেড (ঊীঃৎঁফবফ) ফিড, যা আমাদের দেশের ফ্লোটিং ফিড নামে অধিক পরিচিত। প্রকৃত পক্ষে এক্সট্রুডেড ফিড ভাসমান, ডুবন্ত বা ধীর গতিতে ডুবন্ত (ঝষড়ি ংরহশরহম) হতে পারে। তাই এক্সট্রুডার শুধু ভাসমান ফিডের জন্যই না বরং ডুবন্ত ধীর গতিতে ডুবন্ত (ঝষড়ি ংরহশরহম) এর জন্য হতে পারে। একটু পর্যালোচনা করে দেখা যেতে পারে ভাসমান ফিডের ধারণা কি কারণে তৈরী হয় ঃ প্রকৃতি গত ভাবে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পানির বিভিন্ন স্তরে বিচরণ করে। সাধারনত মাছ পানির যে স্তরে বিচরণ করে সে স্তরেই তাদের খাবার প্রয়োজন হয়। পূর্বে প্রকৃতি নিয়মে মাছর প্রজনন ও বৃদ্ধি জন্য প্রাকৃতিক খাবার পর্যাপ্ত ছিল। কিন্তু বর্তমানে চাষের পুকুরে মাছের ঘনত্ব বেশী থাকায় মাছের প্রজনন ও বৃদ্ধির জন্য দরকারী খাবার মূলতঃ বাহিরে থেকেই সরবরাহ করতে হয়। ক্ষুধার্ত মাছ তাত খাদ্যের জন্য পুকুরের বিভিন্ন স্তরে বিচরণ করে। সেক্ষেত্রে ডুবন্ত ও ভাসমান খাবারই চাষের প্রকুরে প্রয়োগ করা যায়। তবে ভাসমান খাবারে কিছু বৈশিষ্ট যা ডুবন্ত খাবারের থেকে ভিন্নতর, যেমন- মাছের পরিপাকতন্ত্র ক্ষুদ্র ও পরিপাক প্রক্রিয়া স্বল্প মেয়াদী হওয়ায় মাছের জন্য হালকা খাদ্য অধিক উপযোগী। হালকা কাবার দ্রুত পরিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাছের ওজন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মূলতঃ এই ধারনা থেকেই শুরু হয় এক্সট্রুডেড ফিড টেকনোলজির বিকাশ। সাধারনত ডুবন্ত ফিডে স্টার্চের পরিমান শতকরা ১০ ভাগ হয়ে থাকে অন্যদিকে এক্সট্রুডেড ফিডে কমপক্ষে শতকরা ২০ ভাগ হয় যা তুলনামূলকভাবে সহায়ক হয়। আবার চিংড়ি খাদ্য বিষয়ে বলা যায়, ভাসমান ফিড চিংড়ির জন্য নয়, কারন তারা পানির সর্বনি¤œ স্তরে বিচরণ করে। চিংড়ি খাদ্য সবসময়ই ডুবন্ত হওয়া বাঞ্চনিয়। আমাদের দেশে চিড়িং খাদ্য পিলেট মেশিন থেকে তৈরী। অেেনকেরই জানা নেই যে চিংড়ির ডুবন্ত খাদ্য এক্সট্রুডার থেকেও তৈরী হতে পারে। এক্সট্রুডার থেকে চিড়িংর ডুবন্ত খাদ্য তৈরী করা হলে অধিক স্টার্চের পরিমান ও পানিতে দীর্ঘক্ষণ স্থায়ীত্বের কারণে চিংড়ি একদিকে যেমন পরিপূর্ণভাবে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে, অন্যদিকে খাদ্য গুণ এবং খাদ্য রূপান্তরের হার অধিক হওয়া খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। তবে এটি বলাই বাহুল্য এক্সট্রুডার থেকে তৈরী চিংড়ি খাদ্য সাধারন খাদ্যের তুলনা ব্যয়বহুল। আয় ও ব্যয়ের বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এক্ষেত্রেও এক্সট্রুডেড ফিডের ব্যবহার খামারীদের জন্য লাভজনক। পিলেটেড এবং এক্সট্রুডেড ফিডের বিশেষ পার্থক্য হচ্ছে, পিলেটেড খাদ্য পানিতে খুব বেশী স্থায়ী হয় না বলে খাদ্যের অপচয় বেশী হয়, অপরদিকে পানিতে এক্সট্রুডেড খাদ্যের স্থায়ীত্ব বেশী হওয়ায় এর কোন অপচয় নেই।